আজ ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটিয়ায় সম্পত্তির জেরে মাকে হত্যা করা মাঈনু কারাগারে


পটিয়ায় সম্পত্তির জেরে মাকে হত্যা করা মাঈনু এখন কারাগারে

পটিয়া প্রতিনিধি:

মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনু স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় জড়িয়ে পড়েছেন রাজনীতিতে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরে নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি।
নানা অপরাধে জড়িয়ে হয়েছেন একাধিক মামলার আসামি। পরিবার পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়া হলেও দুই বছরের মাথায় অপরাধে জড়িয়ে ভিসা বাতিল করে দেশটি।

পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করার পর বউকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে পরিবার। বউকে নিয়ে যাওয়ার পর মাঈনুকে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে সম্পত্তির জেরে মা জেসমিন আক্তার হত্যা করে কারাগারে যেতে হচ্ছে মাঈনুকে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ।

গ্রেফতার মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনু (২৯) পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে। গত ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে পটিয়ায় পৌরসভার নিজ বাড়িতে ছেলে মাঈনুর গুলিতে তার মা জেসমিন আক্তার (৫০) নিহত হন। একই রাতে পটিয়া থানায় মাঈনুকে একমাত্র আসামি করে বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, শামসুল আলম মাস্টার জীবিত থাকাবস্থায়ই মাঈনুদ্দীন উচ্ছৃঙ্খল ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য ছেলের ওপর তিনিও বিরক্ত ছিলেন। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য মাইনুলকে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে অপরাধে জড়িয়ে দুই বছর পর দেশে চলে এসেছে। দেশে আসার পর আবারও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা শুরু করে। মাইনুল সবসময় ইনব্যালেন্স জীবনযাপন করেন। মাইনুলের পরিবারের একটি প্রভাব ছিল এলাকায়। এটি ব্যবহার করেও এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ করেছে মাঈনুল। তার প্রতি তার বাবাও সন্তুষ্ট ছিল না। জীবদ্দশায় তার বাবাও তাকে কোনো সম্পত্তি লিখে দিয়ে যায়নি। সবকিছু মিলিয়ে মাঈনুল তার পরিবারের প্রতি নাখোশ ছিল।

অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেফতারের পর মাঈনুদ্দীনের মধ্যে মাকে খুন করার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা দেখিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হ্ত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি সে তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিল। সেটি বৈধ নাকি অবৈধ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ১৩ জুলাই শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটি জেনে মাঈনুদ্দীনের ধারণা হয়েছিল, তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাবেন। সেটি নিয়ে দুপুরে ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাধায় মাঈনুদ্দীন। একপর্যায়ে নিজের কোমরে থাকা পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলি ছোড়ে। সেটি তার শরীরে না লাগায় আরেকটি গুলি ছোড়ে মায়ের দিকে।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, জেসমিন আক্তারকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে মাঈনুদ্দীন মাঈনু পটিয়ার থেকে চন্দনাইশের দোহাজারীতে চলে যায়। সেখান থেকে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সাতকানিয়ায় গিয়ে একটি কারখানায় আশ্রয় নেন। গ্রেফতার এড়াতে মাঈনুদ্দীন তার মোবাইল ফোন সেট ফেলে দেন। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বুধবার সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে সে ঢাকাগামী বাসে উঠলেও টিকিট না কেটে বাস সুপারভাইজারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে গাড়িতে উঠেছিল। ওই বাস শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।

এমএ ইউসুফ বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পারিবারিক অবক্ষয় থেকে। পরিবার থেকে যদি মাইনুলকে ছোট বেলা থেকে নজরদারিতে রাখা হতো, শাসনের মধ্যে রাখা হতো তাহলে মাইনুল এমন উচ্ছৃঙ্খল হতো না। হয়তোবা এমন পথে পা বাড়াতো না। তাকে দেখেই মনে হয় সে নেশাগ্রস্ত। আজকের মাঈনু একদিনে তৈরি হয়নি। পরিবারের নজরদারিরসহ বিভিন্ন কারণে সে এমন হয়েছে। আআইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমরা অনুরোধ জানাতে চাই, আপনার সন্তানের প্রতি নজর রাখুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর